কথাটা সাকিব আল হাসানই বলেছিলেন। সীমানায় রুবেল হোসেন অসাধারণ ক্যাচ নেওয়ার পর প্রশংসিত হচ্ছিলেন সর্বত্র। সাকিব সংবাদ সম্মেলন এসে ওই ক্যাচ নিয়ে স্রেফ প্রতিক্রিয়ায় বলেছিলেন, ‘ক্যাচ নেওয়ার জন্যই রুবেলকে নেওয়া হয়েছে।’ আরেক সংবাদ সম্মেলনে একবার মুশফিক রহিম বলেছিলেন, ‘ক্যাচ মিস হতে পারে। এটা খেলারই অংশ।’ অবশ্য তিনিও স্বীকার করেছিলেন ক্যাচ ধরাই খেলার অংশ। মিস করাটাই অস্বাভাবিক।
হঠাৎ ক্যাচ নিয়ে এতো আলোচনা কেন? বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার ম্যাচের স্কোরবোর্ডের দিকে তাকালে সব আলোচনা সামনে চলে আসবে। যেখানে বাংলাদেশ টেস্টের প্রথম দিনেই তিন ক্যাচ ছেড়ে দলকে কঠিন বিপদে ফেলেন। ৪ উইকেটে ৩১৪ রানে শ্রীলঙ্কা প্রথম দিনের খেলা শেষ করেছে। অথচ স্কোরবোর্ডে আরো ৩ উইকেট যোগ হতে পারত। রান অন্তত একশ কম হতে পারত! তিন ক্যাচ মিসেই সব হিসেবে গণ্ডগোল। মাহমুদুল হাসান জয়, সাকিব আল হাসান ও শাহাদাত হোসেন দিপু ক্যাচ ছেড়ে বাংলাদেশকে ব্যাকফুটে ঠেলে দিয়েছেন। সঙ্গে সরাসরি থ্রোতে মিরাজ রান আউট করতে পারলে টেস্টের প্রথম দিনটা কেবল বাংলাদেশের নামেই লিখা থাকত।
ক্যাচ মিসের এই মহড়া শুরু কয়েছে সিলেট টেস্টে। প্রথম দিনের সকালে ৫৭ রানে ৫ উইকেট নেওয়ার পর স্লিপে কামিন্দু মেন্ডিসের ক্যাচ ছাড়েন জয়। পরে কামিন্দু মেন্ডিস সেঞ্চুরি করেন। ওই এক ক্যাচ মিসের পর গোটা দলের মনোবল ওলটপালট হয়ে যায়। সোয়া চারদিনের লড়াইয়ে বাংলাদেশের সঙ্গী হয় ৩২৮ রানের বিব্রতকর হার। সিলেটের পর চট্টগ্রামের ভাগ্যেও কি এমন কিছু অপেক্ষা করছে স্বাগতিকদের জন্য? উত্তরটা সময় বলে দেবে। তবে বাংলাদেশের পেস বোলিং কোচ জানিয়ে রাখলেন, মাঠে ক্যাচ নিতে না পারলে, সুযোগ কাজে লাগাতে না পারলে সামনে কঠিন সময় অপেক্ষা করবে বাংলাদেশের জন্য।
প্রথম দিনের খেলা শেষে দলের প্রতিনিধি হয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসে অ্যাডামস বলেছেন, ‘ক্রিকেটে আপনি ক্যাচ ধরতে না পারলে ভুগবেন। আমি যোগদানের পর থেকে ফিল্ডিংয়ে উন্নতি দেখছি। গ্রাউন্ড ফিল্ডিং বেশ ভালো। বেশ কিছু ভালো ক্যাচও নিতে পেরেছি আমরা। তবুও বলবো, যদি আপনি শুরুতে ক্যাচ ছেড়ে দেন তাহলে প্রচুর পিছিয়ে যাবেন। আমরা প্রচুর ক্যাচ ছেড়েছি। এটা নিয়ে কাজ করছি। কেউ ইচ্ছা করে ক্যাচ ছাড়ছে না। তারা চেষ্টা চালাচ্ছে। কিন্তু কোনো না কোনোভাবে মিস হয়ে যাচ্ছে। এজন্য আমাদের ধারাবাহিকভাবে আরো উন্নতি করতে হবে।’
নতুন বলে শুরুতে হাসান মাহমুদ সুযোগ তৈরি করেছিলেন। অভিষিক্ত পেসারের অফস্টাম্পের গা ঘেঁষা বলে ক্যাচ দিয়েছিলেন মাদুশঙ্কা। ক্যাচ নিতে পারেননি জয়। পরে দিমুথ করুণারত্নের ক্যাচ ফাইন লেগে ছাড়েন সাকিব। পড়ন্ত বিকেলে ম্যাথিউজের ক্যাচ শাহাদাতের হাতের নাগাল দিয়ে বেরিয়ে যায়। বোলারার যেসব সুযোগ তৈরি করেছিলেন ফিল্ডারদের কারণে সেগুলো হাতের মুঠোয় জমেনি। তবে বোলারদের ভালো বোলিংয়ের প্রশংসায় অ্যাডামস, ‘আমি মনে করি হাসান দারুন ছিল। ক্যাচ মিস করলে আমাদের অনেক ভুগতে হবে সামনে। সিলেটের মতোই আমরা চাপ তৈরি করেছিলাম কিন্তু লম্বা সময়ের জন্য পারিনি। আমাদের এই জায়গায় কাজ করতে হবে।’
হাসানকে নিয়ে আলাদা করে অ্যাডামস যোগ করেন, ‘আমি মনে করি সে আজ দারুণ বল করেছে। বোলিংয়ে তার নিয়ন্ত্রণ ভালো ছিল। তার গতিও ভালো। গড়নও সুন্দর। এক জায়গায় লাগাতার বল করে গেছে। এই পর্যায়ের ক্রিকেটে এটাই প্রয়োজন। বেশ প্রতিশ্রুতিশীল একজন বোলার যার সিম মুভমেন্ট ভালো। তরুণ একজন বোলারের থেকে যা যা প্রত্যাশা করি সবগুলোই তার মধ্যে পেয়েছি।’
ক্যাচ মিস না হলে স্কোরবোর্ডের চেহারা হতে পারতো ভিন্ন। প্রথম দিনটা হতে পারত কেবলই বাংলাদেশের। আগামীকাল নতুন দিন। নতুন লড়াই। এই লড়াইয়ে জিততে হলে বল হাতে জমাতে হবে। নয়তো সামনে আরো কঠিন সময় অপেক্ষা করছে।