Friday, September 20, 2024
Google search engine
HomeUncategorizedঘুষ কেলেঙ্কারির ‘উস্তাদ’ মুস্তাফিজের টার্গেট গ্রাহক হয়রানি  

ঘুষ কেলেঙ্কারির ‘উস্তাদ’ মুস্তাফিজের টার্গেট গ্রাহক হয়রানি  


২৫ লাখ টাকা নিয়ে রাজধানীর বনশ্রীর একটি ভবনে নতুন বিদ্যুৎ সংযোগের প্রতিশ্রুতি দেওয়া ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ডিপিডিসি)’র নির্বাহী প্রকৌশলী (বনশ্রী ডিভিশন) মোস্তাফিজুর রহমান এবার গ্রাহক হয়রানিতে নেমেছেন। এর আগে, নিজে ঘুষ নিয়ে ১০ তলা একটি ভবনে বিদ্যুৎচাহিদা কম দেখিয়ে ডিপিডিসিকে আর্থিক ক্ষতির মুখে ফেলেন। এ নিয়ে গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশ এবং চাপের মুখে এখন উল্টো বিদ্যুৎচাহিদা বেশি দেখিয়ে নতুন করে টাকা চাইছেন গ্রাহকের কাছে। বিষয়টি এখন গ্রাহকের ‘গলার কাটায়’ রূপ নিয়েছে। মোস্তাফিজুর রহমানের ঘুষ কেলেঙ্কারির পর এখনও তার বিরুদ্ধে কোনও ধরনের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়নি ডিপিডিসি। তবে, তাকে শোকজ করে জবাব দিতে ১০ দিন সময় দেওয়া হয়েছে।

পড়ুন- টাকা দিলে অনিয়মকে ‘নিয়ম বানান’ মোস্তাফিজ

সরেজমিনে দেখা গেছে, বনশ্রীর শীতল প্রপার্টিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ রাজ্জাকের বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকায় ১০তলা ভবনের ৪৪টি ফ্ল্যাট এখনও ভাড়া হয়নি। ওই ভবনে একটি নির্মাণ-বিদ্যুৎ সংযোগ থাকলেও বিল আসে কয়েকগুণ। যা স্বাভাবিক বিদ্যুৎ বিলের চেয়ে ৫ গুণ বেশি। এত টাকা বিদ্যুৎ বিলের কারণে কেউ এই ভবন ভাড়া নিতে আগ্রহ প্রকাশ করেন না। তাই, প্রতি মাসে ভবনমালিকের গচ্ছা যাচ্ছে লাখ লাখ টাকা।

শীতল প্রপার্টিজের ম্যানেজার মফিজুর রহমান রাইজিংবিডিকে বলেন, বনশ্রী ডিপিডিসির নির্বাহী প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমান এখন বিদ্যুৎচাহিদা বেশি ধরে সংযোগ দেওয়ার কথা বলছেন। এক্ষেত্রে আরও ১০ লাখ টাকা চাচ্ছেন। বলছেন, এই ভবনে অনেক বেশি বিদ্যুৎ লাগবে। এজন্য অতিরিক্ত টাকা দিতে হবে। বিষয়টি আমাদের জন্য খুব কঠিন হয়ে যাচ্ছে।   

ডিপিডিসির নথি ঘেটে দেখা গেছে, ওই ভবনের প্রয়োজনীয় চাহিদাকৃত লোড, ৪৫টি ফ্ল্যাটের জন্য ৩২৭ কিলোওয়াট আবশ্যকতা রয়েছে। কিন্তু, নথিতে লোডের চাহিদা ২৪৪ কিলোওয়াট মাত্র। অর্থাৎ, লোড কম দেখিয়ে ডিপিডিসিকে আর্থিকভাবে ক্ষতি করে নিজে লাভবান হয়েছেন মোস্তাফিজ। 

এদিকে, গত ৬ মাস আগে আবেদন করেও বিদ্যুৎ সংযোগ পাচ্ছেন না গ্রাহক এম এ রাজ্জাক। এ নিয়ে রাইজিংবিডিতে ‘‘টাকা দিলে অনিয়মকে ‘নিয়ম বানান’ মোস্তাফিজ” শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ হওয়ার পর নড়েচড়ে বসেছে ডিপিডিসির প্রধান কার্যালয়। তবে, ডিপিডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক দেশের বাইরে থাকায় একটি মহল এই সুযোগে মুস্তাফিজকে বাঁচাতে মরিয়া হয়ে উঠেছে।

ডিপিডিসির একটি সূত্র বলছে, সংবাদ প্রকাশের পর থেকেই দৌড়ঝাঁপ শুরু করেন ডিপিডিসির বনশ্রী ডিভিশনের নির্বাহী প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমান। গত ৮ মার্চ ডিপিডিসির ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তার বনশ্রীর বাসায় যান ওই নির্বাহী প্রকৌশলী। এমনকি, ওই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা সেন্ট্রালের আরেক কর্মকর্তাকে নানাভাবে চাপ দিচ্ছেন, যাতে করে মোস্তাফিজুর রহমানকে রক্ষা করে এর দায় বনশ্রী এনওসিএস’র অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার কে এম হায়াতের কাঁধে ‘চাপিয়ে দেওয়া’ হয়। কিন্তু কোনোভাবে রাজি হয়নি সেন্ট্রালের ওই কর্মকর্তা।

সূত্র বলছে, গত ৬ মাস আগে বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য আবেদন করেন বনশ্রীর এম এ রাজ্জাক। একজন দালালের মাধ্যমে ওই গ্রাহক সরাসরি নির্বাহী প্রকৌশলীর সঙ্গে দেখা করেন। তিনি তাকে ‘গ্রিন এনার্জি’ নামের একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করিয়ে দেন। মূলত ‘গ্রিন এনার্জি’ নামের যে প্রতিষ্ঠান, তার সঙ্গে কাজ পাইয়ে দেওয়ার পারসেন্টেজের চুক্তি আছে নির্বাহী প্রকৌশলী মুস্তাফিজের।

গ্রাহক শীতল প্রপার্টিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ রাজ্জাক বলেন, ৬ মাসেও বিদ্যুৎ সংযোগ পাইনি। আমার ফ্ল্যাটগুলো খালি পড়ে আছে। আবার নির্মাণাধীন ভবনের হিসেবে যে বিদ্যুৎ লাইন আছে, সেখানে কয়েকগুণ বেশি টাকা দিচ্ছি। আমার দোষ কোথায়? বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকায় এতগুলো ফ্ল্যাট ভাড়া হচ্ছে না। ফ্ল্যাট ভাড়া না হলে আমাকে পথে বসে যেতে হবে। ধারদেনা করে অনেক স্বপ্ন নিয়ে এই ভবন নির্মাণ করেছি। এত ঘুষ দেওয়ার পরেও সংযোগ পেলাম না। আমি তো নির্বাহী প্রকৌশলীকে টাকা দিয়েছি। তিনি কেন আমার সংযোগ দিতে তালবাহানা করছেন, বুঝতেছি না।

পড়ুন- ডিপিডিসিতে চক্রান্তকারীরা থেমে নেই!

অভিযুক্ত ডিপিডিসির বনশ্রী নির্বাহী প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমানের সঙ্গে গত তিন দিন যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনি সহযোগিতা করেননি। একাধিকবার ফোন করলেও রিসিভ করেননি। হোয়াটসঅ্যাপের ম্যাসেজেরও উত্তর দেননি। মূলত সংবাদ প্রকাশের পর থেকে তিনি গণমাধ্যম এড়িয়ে চলছেন। তবে, আগের প্রতিবেদনে তিনি বলেছিলেন, ‘এ বিষয়ে আমি কিছু জানি না। আপনারা কাছে কোনও প্রমাণ আছে? আর এই বিষয়ে আমি কোনও কিছু বলতে চাই না।’

ডিপিডিসির প্রধান প্রকৌশলী (সেন্ট্রাল) মো. জাহাঙ্গীর আলম রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘তাকে (মুস্তাফিজুর রহমান) ১০ দিন সময় বেঁধে দিয়ে ঘটনার ব্যাখ্যা চেয়েছি। ঘটনার বিষয় জানতে হলে অপেক্ষা করতে হবে। তদন্তের আগে এর চেয়ে বেশি কিছু বলার নেই।’

জানতে চাইলে ডিপিডিসির নির্বাহী পরিচালক (টেকনিক্যাল) কিউ. এম. শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমি ঘটনা শুনেছি। বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করা হবে। বিধিমালা অনুসারী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’



RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments