Thursday, September 19, 2024
Google search engine
HomeUncategorized‘হাসিখুশি সাকিব স্বস্তি নিয়ে ফিরেছে’

‘হাসিখুশি সাকিব স্বস্তি নিয়ে ফিরেছে’


চোখে ঘুমের রেশ তখনও কাটেনি। টিম বাস থেকে সাকিব আল হাসান নামলেন চোখ কচলিয়ে। চট্টগ্রামের আকাশের তখন মন খারাপ। এক পশলা বৃষ্টি ভিজিয়ে গেছে গোটা শহর। সকাল ১০টায় দলের অনুশীলন! আরেকটু ঘুম হলে মন্দ হতো না নিশ্চয়ই। কিন্তু এক বছর পর টেস্ট দলে ফেরা সাকিব জানতেন আজকের দিনটা তার জন্য বিশেষ কিছু।

শনিবার শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্টে মাঠে নামার আগে সম্ভাব্য সব প্রস্তুতি তার সারতে হবে! কি ভাবছেন? ব্যাটিং, বোলিং কিংবা ফিল্ডিং করে সাকিব প্রস্তুতি নেবেন? স্কিল ট্রেনিংয়ে ঘাম ঝরাবেন? লম্বা সময় ধরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলে আসা সাকিব ম্যাচের আগের দিন কিছু করেন না। এটা একেবারে নতুন না। তার পুরোনো অভ্যাস। শুক্রবারও তেমন কিছুই করলেন না। তবে যেটা করলেন সেটা অভিজ্ঞ, সিনিয়র ক্রিকেটার হিসেবে করা তার দায়িত্বের ভেতরেই পড়ে।

কালো মেঘ সরে গিয়ে সাগরপাড়ের স্টেডিয়ামের আকাশে তখন নীল মেঘ খেলা করছিল। বাংলাদেশ দল অপেক্ষায় মাঠে নামার। দলের ক্রিকেটারদের সঙ্গে সাকিবও নামলেন চট্টগ্রামের সবুজ গালিচায়। এরপর অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্তকে নিয়ে গেলেন চট্টগ্রামের ২২ গজ দেখতে। অধিনায়ক হিসেবে উইকেট দেখা কাজ। শান্ত কাজটা করছিলেন ঠিকঠাক। সঙ্গে সাকিবকে পাওয়া যেন তার কাছে বাড়তি কিছু। এই টেস্টে চন্ডিকা হাথুরুসিংহের পরিবর্তে দলের দায়িত্ব সামলাচ্ছেন নিক পোথাস। সাকিব ও শান্তর সঙ্গে পোথাসও খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে উইকেট দেখেছেন।

চট্টগ্রামের উইকেট হয় ব্যাটিং বান্ধব। এবারও তেমন কিছুই হওয়ার কথা। তাই ত্রয়ীর কথায় কিংবা ভাবে তেমন দুশ্চিন্তা দেখা যায়নি। বাকিদের রেখে সাকিবের এবার দলছুট। ড্রেসিংরুমের সামনে দুইভাগে ভাগ হয়ে ফুটবলে মজেছিলেন সাদমান, জাকির, মুমিনুল, জয়রা। ফুটবল দেখলে ‘হুঁশ’ না থাকা সাকিব জমে গেলেন ফুটবল খেলায়। আজকের দিনে ওইটুকুই তার অনুশীলন। এরপর লম্বা সময় বিভিন্ন জায়গায় আলোচনা, গল্প, হাসি, আড্ডায় সময় কাটে তার। যেখানে কয়েক মুহূর্তে তার সঙ্গী হন নিক পোথাস, আন্ড্রে অ্যাডামস, লিটন দাস কিংবা ট্রেনার ইফতি।

শেষমেশ এই ইফতিই তাকে কাজে ব্যস্ত রাখলেন। শরীরের মেদ কমিয়ে প্রায় ঝরঝরে হওয়া সাকিব অনুশীলনের শেষ পর্যায়ে এসে ফিটনেস ট্রেনিং করলেন। রানিং করলেন, ওয়েট লুস করার ট্রেনিং এবং কিছু ওয়ার্কআউট। গতকাল অনুশীলনে যোগ দিয়ে প্রায় দেড় ঘণ্টা অনুশীলন করেছিলেন। ব্যাটিংয়ে নিজেকে বেশ ভালোভাবে ঝালিয়ে নেন। আজ তাই বাড়তি কিছু করার তাড়না অনুভব করেননি। রৌদ্রজ্জ্বল কন্ডিশনের সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে আবার ফিরেছেন টিম হোটেলে।

শেষ কয়েকদিন ধরেই সাকিবকে বেশ হাসিখুশি লাগছে। ঢাকা লিগের খেলায় আনন্দময় সময় কাটিয়েছেন সতীর্থদের সঙ্গে। কখনো কখনো মেতে ছিলেন খুনসুঁটিতে। বিজ্ঞাপন প্রচারের কাজে যেখানে গিয়েছেন সেখানেও খোলস ছেড়ে বেরিয়ে ভক্তদের দারুণ সময় উপহার দিয়েছেন। ভক্তদের আবদারও পূরণ করেছেন।

সাকিবের এই হাসিখুশি মনোভাব ড্রেসিংরুমে স্বস্তি ফিরিয়েছে বলে দাবি করলেন নিক পোথাস। তার শক্তিমত্তা ড্রেসিংরুমে শক্তির সঞ্চার করেছে। তার অভিজ্ঞতা দলকে দিচ্ছে আত্মবিশ্বাস। তার উপস্থিতি দলকে ভাসাচ্ছে আনন্দে।

নিক পোথাস কথার ঝঁপি খুলে বসলেন, ‘যে কোনো দলেই সাকিবকে পাওয়া ভাগ্যের বিষয়। আমরা তাকে স্বাগত জানিয়েছি। তার মতো একজন ক্রিকেটারকে ড্রেসিংরুমে পাওয়া দারুণ কিছু। তার শক্তিমত্তা সবার মধ্যে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। তার অভিজ্ঞতা মূল্যবান। যখনই সে ফিরে আসে নিজের সর্বোচ্চটা উজাড় করে দেয়। সে যখন আশে পাশে থাকে আমরা তার সঙ্গও উপভোগ করি।’

‘সাকিব যখন দলে ফেরে তখন স্বস্তি নিয়ে আসে। সঙ্গে শান্তও এমন একজনকে পেয়েছে যার কাছ থেকে বাড়তি তথ্য পেতে পারে। কারণ সে এই মূহূর্তে দলের সবচেয়ে অভিজ্ঞ ক্রিকেটার। সে স্বস্তি নিয়ে এসেছে। বিশ্বের অন্যতম সেরা একজন খেলোয়াড়।’ – আরও যোগ করেন পোথাস।

ওয়ানডে বিশ্বকাপের পর সাকিব পেশাদার ক্রিকেট খেললেও এবারই প্রথম জাতীয় দলে ফিরেছেন। বিশ্বকাপ চলাকালীন সময়ে ওজন বেড়েছিল তার। সেই সাকিব গত এক মাস নিজেকে দারুণভাবে নিয়ন্ত্রণ করে, ঘাম ঝরিয়ে ফুরফুরে হওয়ার চেষ্টা করছেন। মেদ ঝরিয়ে হয়েছেন চনমনে। এমন সতেজ সাকিবকে পেয়ে নিক পোথাসের উচ্ছ্বাস টের পাওয়া গেল তার কণ্ঠে, ‘হ্যা তাকে দেখে খুব সতেজ মনে হচ্ছে। সে মেদ ঝড়িয়েছে। খুব ভালো ট্রেনিং করেছে। বিপিএল ভালো কেটেছে তার। ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে ভালো শুরু পেয়েছিল। সে নিজেকে নিয়ে খুশি। আমরা এমন হাসিখুশি সাকিবকেই চাই। তাকে দেখে ভালো লাগছে।’

ব্যাটিং করেননি। বোলিংও করেননি। ফিল্ডিং তো দূরের বিষয়। এক বছর পর টেস্ট খেলার অপেক্ষায় থাকা সাকিব কতটুকু প্রস্তুত মাঠে নামতে তা বোঝা গেল গুরুর ভাষ্যে, ‘সে পেশাদার ক্রিকেটার। সে জানে সে কি করেছে এবং কি করে নাই। কন্ডিশনের সঙ্গে মানিয়ে তার কি করা উচিৎ সেটাও সে জানে। এজন্যই সে বিশ্বমানের।’ 



RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments